December 23, 2024, 1:57 am
একটি দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদন/
শুরু হয়েছে ১৪২৮ বঙ্গাব্দ। আজ পহেলা বৈশাখ। বাঙালীর ঐতিহ্য, প্রাণ ও আবেগের দিন, উচ্ছাসের দিন। কিন্তু ভিন্ন চিত্র এবারও। গতবছরেরও মতোই সবকিছু বিবর্ণ, বিমর্ষ। ঐতিহ্যের উৎসব নেই, প্রাণের উচ্ছাস নেই। ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ গানের সুর ছুঁয়ে যাওয়া নেই। শিল্পীদের রঙতুলির আঁচড় নেই। নেই মঙ্গলযাত্রা শোভাযাত্রা। আবাহনের সেই ডাক নেই। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সেই চিরচেনা দৃশ্য আজ আর দেখা যাবে না। ঘরে ঘরে বন্দি হয়ে পড়েছে আনন্দের সেই বাঁধভাঙা জোয়ার। তবুও আজ বাঙালির প্রাণের পহেলা বৈশাখ।
সর্বগ্রাসী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়াবহতা সারা বিশ্বিজুড়ে। আক্রান্ত বাংলার মাটিও। এই ভয়াবহতা রোধে আজ বুধবার থেকে সারাদেশে সাতদিনের লকডাউন। সবার মনে পহেলা বৈশাখের সেই চিরায়ত গান গুঞ্জরিত হলেও এবারও তার আবেদন ভিন্ন। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বাঙালি এবারও ঘরবন্দি হয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় পালন করবে পহেলা বৈশাখ।
পেছনে ফেরা/
কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন এই বাংলা সন। ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে।
দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়। কিন্তু গত বছরের মতো এবারও মঙ্গলশোভাযাত্রা হচ্ছে না।
নানা আঙ্গিকে বাঙালী পালন করে আসছে এই বাংলা বছরের প্রথম দিনটি। মঙ্গল শোভাযাত্রায় বিভিন্ন ধরনের প্রতীকী শিল্পকর্ম, বাংলা সংস্কৃতির পরিচয়বাহী নানা প্রতীকী উপকরণ, বিভিন্ন রঙের বিশাল মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি যেমন : প্রজাপতি, ঐতিহ্যবাহী পুতুল থাকে যা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোককাহিনী তুলে ধরে। কিন্তু এসবের কিছুই এবার নেই। কিন্তু তাতে কি। আশা ও প্রত্যাশা নিয়েই জীবন। বরং এবারের বর্ষ বরণ হোক করোনার মত বিধ্বংসী ভাইরাস দূর করার প্রত্যাশা নিয়ে। দুর হোক সকল কমসা। সকল জ¦রা, সকল ব্যাধী। এসো হে বৈশাখ এসো এসো… মুছে যাক গøানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।
Leave a Reply